অন্যান্য

আলসারের লক্ষণ ও আলসার থেকে মুক্তির উপায়

আলসারের লক্ষণ ও আলসার থেকে মুক্তির উপায়

পেটের আলসার বেশ কমন একটি রোগ, যা শিশু থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের মানুষেরই হতে পারে। সাধারণত ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সীদের ক্ষেত্রে রোগটি বেশি দেখা যায়। দিন দিন এ রোগের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। নারীদের চেয়ে পুরুষেরা সাধারণত পাকস্থলীর আলসারে বেশি আক্রান্ত হয়।

তাই আপনাদের সুবিধার জন্য আজকে আমরা আলসারের কারণ, প্রাণঘাতী আলসার কেনটি, আলসার থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আলোচনা করবো। আপনি যদি আলসার রোগটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে চান। তাহলে আমাদের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সূচিপত্রঃ আলসারের লক্ষণ ও আলসার থেকে মুক্তির উপায়

  • আলসার কি
  • আলসারের লক্ষণ
  • আলসারের কারণ
  • গ্যাস্ট্রিক আলসারের জটিলতা
  • গ্যাস্ট্রিক আলসার নির্ণয় করার উপায়
  • কোন বয়সে আলসার রোগ বেশি হয়
  • প্রাণঘাতী আলসার কেনটি
  • গ্যাস্ট্রিক আলসার কখন বিপজ্জনক হয়
  • পেপটিক আলসারে আক্রান্ত ব্যক্তির গ্রহণীয় ও বর্জনীয় খাদ্য
  • আলসার হলে কি কি খাবার খেতে হবে
  • আলসার থেকে মুক্তির উপায়

আলসার কি

আলসার কি

সাধারণ ভাবে বলতে গেলে আলসার কথার অর্থ ক্ষত। এই ক্ষত পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে হয় এবং তা থেকে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। পরিপাকতন্ত্রে অ্যাসিড বেশি মাত্রায় উৎপন্ন হলে এই রোগ হয়। অন্য দিকে, অ্যাসিড মাত্রা ঠিক থাকলেও কয়েকটি ক্ষেত্রে এই রোগ হয়। তখন সেই আলসারকে সংক্রমণ ঘটিত আলসার বলে।

সাধারণ ভাবে খাদ্যথলি বা ক্ষুদ্রান্তের প্রথম ভাগে এই রোগ হয়। তবে এই রোগকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। খাদ্যথলির ভিতর যে আলসার হয় তাকে বলে গ্যাস্ট্রিক আলসার। ক্ষুদ্রান্তের প্রথম অংশে যে আলসার হয়, তাকে বলে ডিওডিনাম আলসার বলে।

খাদ্যথলিতে অ্যাসিডের মাত্রাধিক্যের কারণে এই রোগ হলে সেখানে অ্যাসিড থেকে ক্ষত সৃষ্টি হয়। অন্য দিকে, সংক্রমণ থেকেও এই রোগ হয়। ‘এইচ পাইলোরি’ নামে একটি ব্যাকটেরিয়া থেকে সংক্রমণ হয়। এই সংক্রমণের ফলে ক্ষুদ্রান্তের ভিতরে আলসার দেখা দিতে পারে।

আলসারের লক্ষণ

এই রোগের বেশ কিছু লক্ষণ আছে, সেগুলি খুব সাধারণ। চলুন জেনে নেই বিভিন্ন প্রকার আলসারের লক্ষণ।

আলসারের লক্ষণ

পেপটিক আলসারের লক্ষণ

১. বুকজ্বালা

২. পেটের উপরের দিকে যন্ত্রণা

৩.খাওয়ার পরে পেট ফুলে থাকা বা পেট ফেঁপে থাকা

৪. মুখ দিয়ে নুন জল ওঠা

৫. গা বমি ইত্যাদি

এ ছাড়াও জেনে রাখুন, গ্যাস্ট্রিক আলসার অর্থাৎ খাদ্যথলিতে আলসারের লক্ষণঃ

১. খাওয়ার পরেই পেট জ্বালা করবে

২.এই সময়ে রোগী খেতে ভয় পাবেন

৩.খাওয়ার প্রতি অনীহা তৈরি হবে।

ডিওডিনাম আলসার অর্থাৎ ক্ষুদ্রান্তে আলসারের লক্ষণ

পেট খালি থাকলে বা দীর্ঘক্ষণ না খেলে পেটে জ্বালা করবে। অনেক সময় রাতে অনেক ক্ষণ পেট খালি থাকলে, রোগী পেটের জ্বালা বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে কিছু খাবারের খোঁজ করেন।

আলসারের কারণ

আলসারের কারণ

অনেক কারণে আলসার দেখা দেয়। ব্যাকটেরিয়া আছে যাকে দেখা যায় পাকস্থলির শ্লেষ্মার স্তরে। এরা স্মল ইনটেস্টাইনেরও থাকে। নিচে আলসারের কারণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

১. গ্যাসট্রিক আলসারের মূল কারণ হল,পাকস্থলী থেকে অল্প মাত্রায় মিউকাস (শ্লেম্মা) ক্ষরণ। মিউকাস বা শ্লেম্মা পাকস্থলীর অন্তঃস্থ গাত্রে এমনভাবে আবরণ রচনা করে যে, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে না।

২.হেলিকোবেকটার পাইলোরি (h. pylori) ব্যাকটেরিয়া আলসারের কারণ হতে পারে। পাকস্থলীর ভেতরের দেয়ালে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। এই সংক্রমণ ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়াতে পারে। চুমু, খাবার বা পানি আদান-প্রদানের কারণে এমনটা হয়।

৩. নিয়মিত ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার জন্যে একই ঘটনা ঘটে। ননস্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্লামাটরি ওষুধ (এনএসএআইডি) পাকস্থলী এবং স্মল ইনটেস্টাইনে প্রদাহের কারণ হয়। বয়স্কদের মধ্যে পেপটিক আলসার অনেক বেশি দেখা যায় অতিমাত্রায় ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার কারণে।

৪. অন্যান্য ওষুধের কারণে আলসার দেখা দেয়। স্টেরয়েড, অ্যান্টিকগুলান্ট, কমমাত্রার অ্যাসপিরিন খেলে আলসার হতে পারে।

৫. ধূমপান, অ্যালোকোহল সেবন এবং মসলাদার খাবার খেলে আরো বেশি সমস্যা দানা বাঁধে।

৬. দীর্ঘদিন ধরে উপযুক্ত প্রােটিনসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ না
করলেও পাকস্থলীতে আলসার দেখা দেয়।

গ্যাস্ট্রিক আলসারের জটিলতা

গ্যাস্ট্রিক আলসারের জটিলতা

পাকস্থলীর আলসারে সাধারণত বিশেষ জটিলতা দেখা যায় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে এসব জটিলতা মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। এই জটিলতাগুলো এতটা গুরুতর যে, এগুলো থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

পেটের আলসারের প্রধান জটিলতাগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  1. আলসার বা ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ হওয়া।
  2. আলসারের জায়গাটিতে পাকস্থলীর আস্তরণ ফুটো হয়ে যাওয়া—একে ডাক্তারি ভাষায় পারফোরেশন (Perforation) বলে।
  3. আলসারের কারণে পরিপাকনালীর ভেতর দিয়ে খাবারের চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া—একে বলা হয় গ্যাস্ট্রিক অবস্ট্রাকশন

গ্যাস্ট্রিক আলসার নির্ণয় করার উপায়

গ্যাস্ট্রিক আলসার নির্ণয় করার উপায়

উচ্চারিত গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল অভিযোগ থাকলে, পারিবারিক ডাক্তার একজন রোগীকে গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টের কাছে পাঠাবেন। anamnesis (চিকিৎসা ইতিহাসের আলোচনা) অনুসরণ করে, একটি শারীরিক পরীক্ষা করা হয়, যার সময় পেট সাবধানে palpated হয়। এটা সম্ভব যে এখানে যে ব্যথা হয় তার কারণে ইতিমধ্যে একটি প্রতিরক্ষামূলক উত্তেজনা রয়েছে। আরও পরীক্ষা, যেমন একটি রক্ত ​​​​পরীক্ষা, অনুসরণ করা হবে।

যদি একজন রোগীর রক্তক্ষরণ গ্যাস্ট্রিক ও আলসার এ ভুগে থাকে, তবে ক্রমাগত রক্তের ক্ষয় রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) হতে পারে। তখন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা (Hb) কমে যায়। কিছু রক্ত ​​পরীক্ষা শরীরে প্রদাহ আছে কিনা তাও নির্দেশ করতে পারে। এটি ঘটতে পারে যখন পাকস্থলীর দেয়াল ভেঙ্গে পাকস্থলীর আলসার হয়।

যাইহোক, পেটের সঠিক অবস্থা গ্যাস্ট্রোস্কোপি দ্বারা সর্বোত্তমভাবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। এটি করার জন্য, একটি ছোট এন্ডোস্কোপ সাবধানে মুখ এবং খাদ্যনালী দিয়ে পেটে ধাক্কা দেওয়া হয়। শ্লেষ্মা ঝিল্লির কোনো পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। এই পরীক্ষার সময়, একটি টিস্যুর নমুনা সাধারণত নেওয়া হয় (বায়োপসি)।

আপনার পরীক্ষা শ্লেষ্মা ঝিল্লিতে সন্দেহজনক পরিবর্তনগুলি গ্যাস্ট্রিক আলসার বা এমনকি গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার কিনা সে সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে। হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া স্থির হয়েছে কিনা তা নির্ধারণ করতে নমুনাটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

কোন বয়সে আলসার রোগ বেশি হয়

কোন বয়সে আলসার রোগ বেশি হয়

এই রোগ ছেলেমেয়ে, ৮ থেকে ৮০— সবার হতে পারে। তবে, একটু বেশি বয়সে এই রোগ বেশি হয়, কারণ তারা অনেকেই বাতের ব্যথায় কষ্ট পান। অনেকেই নানা আঘাত পান, তারা সেই সময় ব্যথা উপশমের ওষুধ খান। ফলে তাদের এই রোগ বেশি হয়। তবে, এখন মধ্যবয়সীদের ক্ষেত্রেও এই রোগ বেশি দেখা যাচ্ছে, কারণ, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন।

সারাদিন কাজের চাপ। খাওয়ার কোনও সময় নেই, মানসিক চাপ— এ সবের ফলে পরিপাকতন্ত্রে অ্যাসিড মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এবং তাঁরা এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুরাও আজ মাঠ থেকে দূরে, তারাও ছোট থেকে গ্যাস, অম্বলে ভুগছে। ফলে ছোটদের মধ্যেও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। তবে ছোটদের ক্ষেত্রে এই হার অনেকটাই কম।

প্রাণঘাতী আলসার কোনটি

প্রাণঘাতী আলসার কেনটি

অবশ্যই, পরিপাকতন্ত্রের আলসার প্রাণঘাতী হতে পারে। এই রোগের ফলে খাদ্যথলি বা খাদ্যনালিতে রক্তপাত হতে পারে। এই রক্ত বমি বা মলের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। এই রোগে বাড়াবাড়ি হলে খাদ্যথলি ফুটো হয়ে যেতে পারে। এর পরে আপনি যদি কোনও চিকিৎসা না করিয়ে ফেলে রাখেন, তা হলে এই আলসার থেকে সহজে মুক্তি মেলে না। এবং বেশি বাড়াবাড়ি হলে মৃত্যুও ঘটতে পারে।

আলসার ক্যানসারের কারণ নয়। তবে সংক্রমণ দিনে দিনে বাড়লে, চিকিৎসা না করালে কিন্তু পরোক্ষ ভাবে এ রোগ থেকে আপনার শরীরে ক্যানসার নিজের জায়গা করে নিতে পারে। তাই আলসারকে খুবই প্রাণঘাতী একটা রোগ বলা হয়।

গ্যাস্ট্রিক আলসার কখন বিপজ্জনক হয়

গ্যাস্ট্রিক আলসার কখন বিপজ্জনক হয়

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, একটি তীব্র গ্যাস্ট্রিক ও আলসার কয়েক দিন বা সপ্তাহের মধ্যে নিজেই সেরে যায়। তবে গুরুতর কোর্সগুলিও সম্ভব। চিকিৎসা ছাড়াই, আলসার পাকস্থলীর গভীর প্রাচীর স্তরে প্রবেশ করতে পারে এবং কখনও কখনও প্রাণঘাতী রক্তপাত ঘটাতে পারে। বিরল ক্ষেত্রে, পেটের দেয়ালে একটি গর্তও তৈরি হবে। এই গ্যাস্ট্রিক ছিদ্রও একটি প্রাণঘাতী জটিলতা। পেটের বিষয়বস্তু পেটের গহ্বরে প্রবেশ করতে পারে এবং বিপজ্জনক প্রদাহ (পেরিটোনাইটিস) হতে পারে। এই জটিলতাগুলির মধ্যে একটি দেখা দিলে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

পেপটিক আলসারে আক্রান্ত ব্যক্তির গ্রহণীয় ও বর্জনীয় খাদ্য

গ্রহণীয় খাদ্য উপাদান

পেপটিক আলসারে আক্রান্ত ব্যক্তির গ্রহণীয় ও বর্জনীয় খাদ্য

মিলে ছাঁটা পরিষ্কার চাল, ময়দা, সুজি, চিড়ে, মুড়ি, পাউরুটি, সাবু। খােসাছাড়ানাে বিভিন্ন ধরনের ডাল। সেদ্ধ বা অর্ধসেদ্ধ ডিম, সেদ্ধ মাছ, অল্প পরিমাণ চর্বিহীন মাংস। ঠান্ডা দুধ, মাখন। সবুজ শাকসবজি। তন্তুহীন সুমিষ্ট ফল বা ফলের রস।চিনি, মিষ্টি। তিল, সরিষা বা সূর্যমুখীর তেল এবং অল্প পরিমাণ ফ্যাটসমৃদ্ধ খাদ্য।

ৰর্জনীয় খাদ্য উপাদান

গােটা দানাশস্য বা তন্তুসমৃদ্ধ দানাশস্য, আটার রুটি,খােসা সমেত ডাল, বাদাম, বিন। লঙ্কা, মশলাযুক্ত খাবার, কাচা পেয়াজ, রসুন, বেশি মাত্রায় তন্তযুক্ত সবজি, মুলাে, শশা,আচার, ছিবড়েযুক্ত কঁচা ফল, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুটি, ভাজা খাবার, কেক, পেস্ট্রি, হালুয়া, বরফি, চকোলেট, পান, তামাক, টকজাতীয় খাবার,মদ, নরম পানীয়, চা, কফি, কার্বোনেটেড পানীয় এবং খুব বেশি গরম বা খুব বেশি ঠান্ডা খাবার।

আলসার হলে কি কি খাবার খেতে হবে

আলসার হলে কি কি খাবার খেতে হবে

কিছু খাবার আছে আলসার সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া হেলিকোব্যাকটার পাইলোরির বিরুদ্ধে লড়াই করে। আসুন জেনে নেওয়া যাক এমন ১৬টি খাবারের কথা।

ফুলকপি

এতে আছে সালফোরাফেন নামের একটি উপাদান যা হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামের ওই ব্যাকটিরয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কেউ যদি প্রতিদিন দুবার করে ৭দিন ফুলকপি খান তাহলে তার পাকস্থলিতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি ৭৮% কমে আসে।

বাধাকপি

এতে আছে ভিটামিন ইউ নামের পরিচিত এস-মিথাইল মিথিওনাইন নামের একটি উপাদান যা আলসারের ক্ষতা সারিয়ে তুলতে পারে। পাকস্থলিতে পিএইচ এর মাত্রায় হেরফের হলে আলসার হয়। আর এই ভিটামিন দেহে ক্ষারক বাড়ায়। এছাড়া এতে আরো আছে অ্যামাইনো এসিড গ্লুটামিন যা আলসার সারতে সহায়ক।

মুলা

এতে আছে আঁশ যা হজমে সহায়ক। এছাড়া জিঙ্ক এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান শুষে নেয় মুলা। মুলা পাকস্থলির প্রদাহরোধ করে এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যাও দূর করে।

আপেল

প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে আলসার দূর হয়ে যাবে। এতে আছে এমন সব ফ্ল্যাভোনয়েড যা আলসার সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্ম প্রতিরোধ করে।

ব্লুবেরি

সকালে ব্লুবের খেলে পাকস্থলির আলসার দূর হয়। এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পুষ্টি উপাদান যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে এবং আলসারের ঘা দ্রুত সারিয়ে তুলবে।

র‌্যাস্পবেরি

এতে আছে উচ্চ মাত্রার ফেনোলিক উপাদান। এছাড়া খাদ্য আঁশেরও বড় উৎস এটি। যা খাবার হজম এবং পাকস্থলির প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করে।

স্ট্রবেরি

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, পাকস্থলির আলসারের বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে কাজ করতে পারে স্ট্রবেরি। এতে আছে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহকে আলসার থেকে প্রতিরক্ষা দেয়। প্রতিদিন এক কাপ করে স্ট্রবেরি খেলে আলসারের ঘা সেরে যায় দ্রুত।

বেল পিপার বা ক্যাপসিকাম

মিষ্টি ক্যাপসিকাম পেপটিক আলসার দূর করতে কার্যকর।

গাজর

পাকস্থলির আবরণ শক্তিশালী করতে বেশ কার্যকর গাজর। এতে আছে ভিটামিন এ যা আলসার, প্রদাহ বা বদহজম দূর করে।

ব্রোকোলি

এতে সালফোরাফেন নামের এমন এক ধরনের রাসায়নিক আছে যা আলসার সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে।

দই

এতে আছে প্রোবায়োটিকস, ল্যাকটোবেসিলাস এবং এসিডোফিলাস যা আলসার সারায়। এছাড়া এটি হজম প্রক্রিয়ায় ভালো এবং খারাপ ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে।

অলিভ অয়েল

অলিভ অয়েলে আছে ফেনল যা ব্যাকটেরিয়ারোধী উপাদান হিসেবে কাজ করে। যা হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামের ব্যাকটেরিয়াকে আরো ছড়িয়ে পড়তে বাধা দেয়।

মধু

ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ানো এবং ক্ষত সারানোর পাশাপাশি মধু পাকস্থলির আলসারও সারায়। আলসার সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া হেলিকোব্যাকটার পাইলোরির উৎপাদন প্রতিরোধ করে মধু। প্রতিদিনি সকালে এক টেবিল চামচ মধু খান।

রসুন

এক কোষ রসুনই হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামের ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধে যথেষ্ট। এতে আছে জীবাণু নাশক উপাদান যা আলসার সারিয়ে তুলতে সহায়ক। ভলো ফল পাওয়ার জন্য প্রতিদিন ২-৩ কোষ রসুন খান।

ক্যাফেইনমুক্ত গ্রিন টি

এতে আছে ইসিজিসি নামে ক্যাটেচিন এর উচ্চ মাত্রা যা আলসার সারায়। এর প্রদাহরোধী এবং পঁচনরোধী উপাদান আলসারের সারাতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় এক কাপ করে গ্রিন টি পান করুন।

যষ্টিমধু

প্রাচীনকাল থেকেই ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এটি। আলসার এবং গ্যাস্ট্রিটিস এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে যষ্টিমধু। এর প্রদাহরোধী উপাদান পাকস্থলিতে প্রদাহ কমায়।

কফি

পাকস্থলীর আলসার থেকে মুক্তি পেতে চাইলে কফি পান করা এড়িয়ে চলুন। কেবল কফিই নয়, ক্যাফেইন সমৃদ্ধ সব ধরনের খাবারই এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।

ঝাল খাবার

ঝাল খাবার পাকস্থলীর আলসার তৈরি করে না। তবে এ ধরনের খাবার পাকস্থলীর দেয়ালে ইরিটেশন তৈরি করে। এতে আলসার বাড়ে। তাই পাকস্থলীর আলসারের রোগীদের ঝাল ও এসিড জাতীয় খাবার এড়িয়ে যেতে বলা হয়।

সময় মতো পেপটিক আলসারের চিকিৎসা না করলে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে

  • পাকস্থলী ফুটা হয়ে যেতে পারে
  • রক্ত বমি হতে পারে
  • কালো পায়খানা হতে পারে
  • রক্তশূন্যতা হতে পারে
  • ক্যান্সার হতে পারে
  • পৌষ্টিক নালীর পথ সরু হয়ে যেতে পারে
  • রোগীর বারবার বমি হতে পারে

আলসার থেকে মুক্তির উপায়

আলসার থেকে মুক্তির উপায়

ডাক্তারি পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ সেবন ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে সহজেই এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। চলুন প্রতিকারের কয়েকটি সহজ উপায় জেনে নেই-

  • ব্যথা সৃষ্টিকারী খাবার এবং পানীয় এড়িয়ে চলুন।
  • কয়েকটি বড় খাবারের চেয়ে সারা দিনে বেশ কয়েকটি ছোট খাবার খাওয়া ভাল।
  • এলকোহল ও ক্যাফেইন যুক্ত খাবার (যেমন: চা, কফি ইত্যাদি) বর্জন করা।
  • ভাজাপোড়া ও মশলাযুক্ত খাবার কম খাওয়া।
  • সামুদ্রিক তৈলাক্ত মাছ বেশি করে খাওয়া। কারন এ ধরনের মাছে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড থাকে যা প্রোস্টাগ্লাণ্ডিন তৈরিতে সাহায্য করে। এই প্রোস্টাগ্লাণ্ডিন আলসার শুকাতে সাহায্য করে।
  • ভাতের সাথে অতিরিক্ত লবন (কাঁচা লবন) না খাওয়া। কারন খাবার লবনে যে অতিরিক্ত সোডিয়াম থাকে তা
    আলসার তৈরিতে সহায়তা করে।
  • ভিটামিন-এ, সি ও ই যুক্ত ফল-মূল ও শাক-সবজি বেশি পরিমানে খাওয়া। এ সকল ভিটামিন আলসারের ঘা শুকাতে
    সাহায্য করে।
  • এসপিরিন ও ব্যাথানাশক ওষুধ এড়িয়ে চলা। এগুলো প্রোস্টাগ্লাণ্ডিনকে বাধা দেয়। ফলে নতুন করে আলসার তৈরি হয়।
  • প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা। এতে অতিরিক্ত এসিড নিষ্ক্রিয় (নিউট্রালাইজ) হয়ে যাওয়ায় আলসারের ঝুঁকি কমে।
  • ঝাঁঝালো মসলাদার খাবার আলসার হতে সাহায্য করে। তেল, চর্বি এবং ঝাঁঝালো মসলাদার খাবার আলসার নিরাময়ে বাধাঁ দেয়। তাই আমাদের এই ধরনের খাবারগুলো বর্জন করতে হবে এবং সহজে হজম হয় এই ধরনের খাবারগুলো খেতে হবে।
  • মানসিক চাপ দূর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম এটি সমর্থন করে। জ্যাকবসনের মতে যোগব্যায়াম, ধ্যান বা পেশী শিথিলকরণের মতো শিথিল ব্যায়ামগুলি দৈনন্দিন জীবনে সর্বোত্তমভাবে একত্রিত হওয়া উচিত।
  • বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ পেপটিক আলসার হেলিকোব্যাকটর পাইলোরি (H.pylori) নামের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারনে হয়ে থাকে। তাই আমাদের এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে হবে। এজন্য আমাদের কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমনঃ আমাদের সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়ার অভ্যাস করতে হবে। বিশেষ করে খাবার খাওয়ার আগে এবং মলত্যাগ করার পর সাবান অথবা হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যাবহার করতে হবে।

উপসংহার

এই ছিল আজকে আলসারের কারণ ও আলসার থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আমাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। আলসার রোগকে আপনি যদি নিয়ন্ত্রণ করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে উপরের নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে।

এজন্য আপনাদের সামনে আজকে আমরা আলসার কি, আলসারের লক্ষণ, আলসারের কারণ, গ্যাস্ট্রিক আলসারের জটিলতা, গ্যাস্ট্রিক আলসার – নির্ণয়, কোন বয়সে আলসার রোগ বেশি হয়, প্রাণঘাতী আলসার কেনটি, গ্যাস্ট্রিক আলসার কখন বিপজ্জনক হয়, পেপটিক আলসারে আক্রান্ত ব্যক্তির গ্রহণীয় ও বর্জনীয় খাদ্য, আলসার হলে কি কি খাবার খেতে হবে, পেপটিক আলসারের ওষুধ, আলসারের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা, আলসার থেকে মুক্তির উপায় প্রকাশ করেছি। আশা করি আমাদের এই পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে এবং আপনারা উপকৃত হবেন। এই ধরনের আরও নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন, ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *