
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকের পোস্টে আমরা আপনাদের সাথে আলোচনা করবো বুক জ্বালাপোড়া নিয়ে। আমরা অনেকেই আছি যারা বুক জ্বালাপোড়া সম্পর্কে এখনো জানি না। আর তাই আজকে শুধুমাত্র তাদের জন্য তৈরি করেছি আমাদের এই পোস্টটি। আজ আমরা আমাদের পোস্টে – বুক জ্বালাপোড়া কি, বুক জ্বালাপোড়া কেন হয়, কি কি কারণে বুক জ্বালাপোড়া হয়, বুক জ্বালাপোড়ার লক্ষণ, কি খেলে বুক জ্বালাপোড়া হয়, বুক জ্বালাপোড়া কমানোর উপায়, বুক জ্বালাপোড়া প্রতিরোধে ঘরোয়া পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো।
চলুন আর দেরি না করে জেনে নিই, বুক জ্বালাপোড়া কি, বুক জ্বালাপোড়া কেন হয়, কি কি কারণে বুক জ্বালাপোড়া হয়, বুক জ্বালাপোড়ার লক্ষণ, কি খেলে বুক জ্বালাপোড়া হয়, বুক জ্বালাপোড়া কমানোর উপায়, বুক জ্বালাপোড়া প্রতিরোধে ঘরোয়া পদ্ধতি।
সূচিপত্রঃ বুক জ্বালাপোড়া কেন হয়? বুক জ্বালাপোড়া কমানোর ঘরোয়া উপায়
১. বুক জ্বালাপোড়া কি
২.বুক জ্বালাপোড়া কেন হয়
৩. কি কি কারণে বুক জ্বালাপোড়া হয়
৪. বুক জ্বালাপোড়ার লক্ষণ
৫. কি খেলে বুক জ্বালাপোড়া হয়
৬. বুক জ্বালাপোড়া কমানোর উপায়
৭. বুক জ্বালাপোড়া প্রতিরোধে ঘরোয়া পদ্ধতি
বুক জ্বালাপোড়া কি

বুক জ্বালা পোড়া হচ্ছে-বুকের ভিতরের মধ্যবর্তী স্থান থেকে শুরু করে গলা পর্যন্ত জ্বালাকর অনুভুতি। এই জ্বালা কখনও কখনও শুধু বুকে আবার কখনও কখনও শুধু গলায় বা উভয় স্থানে হতে পারে। মাঝে মাঝে জ্বালার সাথে ব্যাথ্যা থাকতে পরে। এ রোগে আক্রান্ত হলে পাকস্থলী থেকে এসিড, পিত্তরস এবং খাবার খাদ্যনালী হয়ে উঠে আসে উপরের দিকে। দীর্ঘদিন এমন অবস্থা চলতে থাকলে খাদ্যনালীতে সৃষ্টি হয় ক্ষত।
বুক জ্বালাপোড়া কেন হয়/ কারণ
১. ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া।
২. বুক জ্বালাপোড়ার আরও একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে ধুম পান করা।
৩. অতিরিক্ত মাত্রায় চা, কফি ইত্যাদি পান করা।

৪. অতিরিক্ত মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকা অনেক সময় বুক জ্বালাপোড়ার জন্য দায়ী।
৫. কালো গোলমরিচ, সিরকাযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া।
৬. আচার, টমেটোর সস, কমলার রস, পেঁয়াজ, পিপারমিন্ট ইত্যাদি খাবার অনেক সময় বুক জ্বালাপোড়ার জন্য দায়ী।
৭. পিত্ত থলিতে পাথর থাকলেও বুক জ্বালাপোড়া হতে পারে।
৮. এছাড়া পাকস্থলীর উপর চাপ পড়ে এমন কাজ যেমন এক সাথে বেশি পরিমাণ খাওয়া, স্থুলতা, গর্ভাবস্থা, শক্ত ও মোটা বেল্টের প্যান্ট পড়া ইত্যাদি কারণেও বুক জ্বালাপোড়া হতে পারে।
৯. অ্যালকোহল সেবন বা মদ্য পান করা।
বুক জ্বালাপোড়ার লক্ষণ
- অনেকেরই প্রায়ই বুকে জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে। তবে কিভাবে বুঝবেন আপনি বুক জ্বালাপোড়ায় ভুগছেন। নিম্নে বুক জ্বালাপোড়ার বিভিন্ন লক্ষণসমূহ আলোচনা করা হলো:
- পেটের উপরের দিকে মৃদু ব্যথ্যা অনুভূত হওয়া।
- বুকের ব্যথ্যার সাথে জ্বালা জ্বালা ভাব থাকা।
- কারও কারও বুক জ্বালা খালি পেটে আবার কারও খাবার গ্রহণের পরে হয়।
- বুক জ্বালা পোড়া হওয়ার মাঝে মাঝে ঢেকুর উঠতে পারে।
- বুক জ্বালা পোড়ায় মুখে তিতা স্বাদ অনুভুত হতে পারে বিশেষ করে সকালের দিকে বেশি ঘটে থাকে।
- বুক জ্বালা পোড়া হওয়ার সাথে বমিবমি ভাব ও বমি হতে পারে।
- পাকস্থলীর এসিড সম্প্রসারিত হয়ে খাদ্যনালীর উপর পর্যন্ত চলে আসলে বুকে ব্যথ্যা ও জ্বালা হতে পারে। এই ব্যাথ্যা ও জ্বালা কখনও স্বল্পস্থায়ী আবার কখনও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
- বিশ্রামের সময় বুক জ্বালাপোড়া ও ব্যাথ্যার বৃদ্ধি হয়। শুয়ে থাকা বা আধো শোয়া অবস্থায় এসিড খাদ্যনালী দিয়ে উপরে উঠে আসে। ফলে বুক জ্বালাপোড়া হয়। যখন সোজা হয়ে বসে থাকা হয় তখন মধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে খাদ্যবস্তুসমুহ পাকস্থলীতে থাকে, তাই বুক জ্বালাপোড়া কম হয়।
- দীর্ঘ দিন যাবৎ বুক জ্বালাপোড়া চলতে থাকলে এসিডের কারণে খাদ্যনালী সংকুচিত হয়ে খাবার গিলতে কষ্ট হতে পারে।
কি খেলে বুক জ্বালাপোড়া হয়/বুক জ্বালাপোড়া কমানোর উপায়

১. কেবল তেল-মশলাই নয়, অতিরিক্ত লবণও বুক জ্বালাপোড়ার জন্য দায়ী। তাই প্রতিদিন যতটা লবণ খান, তার চেয়ে ২ গ্রাম মতো কমিয়ে দিন প্রতিদিনের খাবার থেকে।
২. অসময়ে চা-কফি অনেক ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিক ডেকে আনে। বিশেষ করে বয়স বাড়লে যখন-তখন চা-কফি খাবেন না।
৩. বুক জ্বালা ঠেকাতে খাবার থেকে আজই বাদ দিন চিনি। এর পরিবর্তে গুড় বা গুড়ের বাতাসা খেতে পারেন। নারকেলের চিনি ব্যবহার করতে পারলেও ভালো।
৪. কোনো ধরনের খাবারে অ্যালার্জি থাকলে তা এড়িয়ে চলুন। বেশি রাতে দুধ বা ফল খাবেন না।
৫. শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পানি খান।
৬. প্যাকেটজাত ফলের রস, ঠান্ডা পানীয়, সোডা ইত্যাদি এড়িয়ে কাঁচা ফল, ডাবের পানি ইত্যাদি যোগ করুন খাবারের তালিকায়।
৭. ক্ষুধা পেলে একবারে অনেকটা খেয়ে ফেলা আমাদের স্বভাব। তাই খেতে বসার আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিন। এতে পেটে অনেকটা জায়গা কমে যায়, ফলে অনেক খাবার খেয়ে ফেলার প্রবণতা কমে।
৮. প্রয়োজন হলে খাবার পর তিন চা চামচ করে অ্যান্টাসিড জাতীয় সিরাপ যেমন- ফ্ল্যাটামিল ডি এস/ এন্টাসিড প্লাস ইত্যাদি খেতে পারেন। এ ছাড়া অনেক সময় রেনিটিডিন অথবা ফেমোটিডিন জাতীয় অন্যান্য ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। তবে এগুলো শুরু করার আগে চিকিৎসককে দেখিয়ে নেওয়াই ভালো।
বুক জ্বালাপোড়া প্রতিরোধে ৮টি ঘরোয়া পদ্ধতি

১| খাবার খাওয়া
একবারে পেটভরে খেলে এই সমস্যা বেশি হয়। সারা দিনে ভাগ করে অল্প অল্প করে খাবার খাবেন।রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ৩-৪ ঘন্টার মধ্যে কিছু খাবেন না।
২| তুলসি
কয়েকটি তুলসি পাতা ভাল করে ধুয়ে নিন। তারপর এটি চিবিয়ে খান। ৪-৫ টি তুলসি পাতা চিবিয়ে খেলেই হবে। এটি বুক জ্বালাপোড়া হ্রাস করতে সাহায্য করে।
৩| আদা
এক কাপ পানিতে এক চা চামচ আদা কুচি দিয়ে কয়েক মিনিট জ্বাল দিন। তারপর এটি পান করুন।যা আপনার বুক জ্বালাপোড়া রোধ করবে। এছাড়া প্রতিদিনের রান্নায় আদা কুচি রাখুন।
৪| পানি পান করুন
শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে পানি সবচেয়ে কার্যকরী উপাদান। একে বেকিং সোডার সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন। এটি বুকের জ্বালাপোড়া প্রতিরোধে বেশ উপকারী।
৫| কাঠবাদাম
কাঠবাদাম হজমের জন্য ভালো। এটি স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক উপকারী। এটি বুক জ্বালাপোড়া এবং ব্যথা দূর করতে কাজ করে।
৬| কলা
বুক জ্বালাপোড়া প্রতিরোধে কলাও খেতে পারেন। কলার মধ্যে থাকা অ্যান্টাসিড উপাদান বুক জ্বালাপোড়া কমাবে। এ ছাড়া এসিড রিফ্লাক্সের সমস্যাও প্রতিরোধ করবে।
৭| বেকিং সোডা
এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। এটি পান করুন। তাৎক্ষনিক বুক জ্বালাপোড়া রোধ করতে এটি বেশ কার্যকরী। এর পিএইচ ৭ মাত্রার বেশী হওয়ার কারণে এটি পেটের অ্যাসিডকে শান্ত করে জ্বালাপোড়া কমিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন: গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কি, কেন গ্যাস্ট্রিক হয়?
৮| অ্যালোভেরার জুস
বুক জ্বালাপোড়া রোধ করতে খাবার খাওয়ার আগে আধা কাপ অ্যালোভেরা জুস পান করুন। অ্যালোভেরার জুস বুক জ্বালাপোড়া রোধ করে ইনফ্লামেশন দূর করে।
শেষ কথাঃ বন্ধুরা, উপরে এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা বুক জ্বালাপোড়া কি, বুক জ্বালাপোড়া কেন হয়, কি কি কারণে বুক জ্বালাপোড়া হয়, বুক জ্বালাপোড়ার লক্ষণ, কি খেলে বুক জ্বালাপোড়া হয়, বুক জ্বালাপোড়া কমানোর উপায়, বুক জ্বালাপোড়া প্রতিরোধে ঘরোয়া পদ্ধতি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি আমাদের এই পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে এবং আপনারা উপকৃত হবেন। এই ধরনের আরও নতুন পোস্ট পেতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন, ধন্যবাদ।
2 Replies to “বুক জ্বালাপোড়া কি, কেন হয়? বুক জ্বালাপোড়া কমানোর ঘরোয়া উপায়”